হযরত খাদিজা (রাঃ) এর জীবনী-৪র্থ পর্ব

হযরত খাদিজা (রাঃ) এর বিবাহঃ-
তখন কি তিনি একটিবারও চিন্তা করেছিলেন যে, তার এ স্বামী বিয়োগের মধ্যেই নিহিত রয়েছে তার জন্য ইহকাল ও পরকালের সর্বাধিক মঙ্গল। তিনি কি তখন জানতেন যে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের জীবন সঙ্গিনী হবেন তিনি।
মেয়ের করুণ চেহারার দিকে তাকাতে পারে না খুওয়াইলিদ। দু'চোখ অশ্রুতে ভরে যায় তার মেয়ের ভাগ্য বিপর্যয়ের কথা চিন্তা করে। এত দেখে শুনে সুযোগ্য পাত্রের হাতে কন্যা সমর্পন করেন তিনি। মেয়েও তার সুখী হয় কিন্তু সে সুখ স্থায়ী হয় না। নিজেকেই অপরাধী বলে মনে করেন তার কন্যার দুর্ভাগ্যের জন্য। মনে মনে ভাবেন তিনি হয়তো-বা আমার নিজের কোন পাপের ফলেই মেয়ের কপাল ভেঙে যায় পুনঃ পুনঃ। মেয়ের দাম্পত্য সুখের মাথায় আঘাত তুলতে পারেন না তিনি মোটেই। দশটি নয়, পাঁচটি নয়, একটি মাত্র কন্যা তার। কেন তার অদৃষ্টে এমন দুর্যোগের ঘনঘটা নেমে আসে বারবার।
খাদিজার মুখের দিকে তাকালেই দু'চোখ অশ্রুতে পরিপূর্ণ হয়ে যায় খুওয়াইলিদের। পূর্ণ যুবতী খাদিজা সবে মাত্র দুটি সন্তানের মাতা। কি করে তাকে এমন ভাবে ঘরে রাখা যায়। আরবে সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী, শিক্ষিত, সম্মানী ও উচ্চ বংশের লোক খুওয়াইলিদ। তার একমাত্র আদরের দুলালী হযরত খাদিজা এদিকের রূপে-গুণে, শিক্ষা-দীক্ষায় সকলের সেরা, অপরদিকে খুওয়াইলিদের মৃত্যুর পরে খাদিজাই হবে তার বিশাল ঐশ্বর্য্যের একমাত্র অধিকারিণী। আবার চতুর্দিক হতে অসংখ্য প্রস্তাব আসতে থাকে হযরত খাদিজার বিবাহের জন্য। কেনই-বা আসবে না? হযরত খাদিজার মত সুন্দরী, শিক্ষিতা ও গুণবতী রমণী সারা আরবে আর যে একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।
খুওয়াইলিদ কন্যাকে দেখে বলেন, মা ! তোমার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ কর। তুমি রাজি হলে আবার আমি ভালো ঘর, ভালো বর দেখে তোমাকে বিয়ে দেই।
হযরত খাদিজা (রাঃ) উত্তর করেন, না আব্বা! ওসব চেষ্টা আর করবেন না। কোন প্রয়োজন নেই ওসবের। প্রতিজ্ঞা করছি আমি আর স্বামী গ্রহণ করবো না। একবার নয় দুবার তো স্বামী গ্রহণ করলাম ; স্বামী সুখ আমার ভাগ্যে লেখা নেই হয়তো। অবিচল অটল থাকেন হযরত খাদিজা (রাঃ) আপন প্রতিজ্ঞায়।খুওয়াইলিদ আর অধিক পীড়াপীড়ি করেন না মেয়েকে। কিন্তু ইতোমধ্যে চরম দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
নতুন করে আরেকটি চরম বিপদ ঘটে গেল হযরত খাদিজা (রাঃ) এর জীবনে। মাত্র দু'দিনের অসুখে খুওয়াইলিদ ইহলোক ত্যাগ করে চলে যান অনন্ত ঠিকানায় ‌ হযরত খাদিজাকে শোক সাগরে ভাসিয়ে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! সবই আল্লাহর মহিমা। কোন্ উদ্দেশ্যে তিনি কি করেন, তা শুধু তিনিই জানেন। মানুষের সাধ্য কি যে, তার নিগূঢ় রহস্যের উদ্ঘাটন করে।

Comments

Popular posts from this blog

জান্নাতী "হুর" কেমন হবে?

হযরত খাদিজা (রাঃ) এর জীবনী-৫ম পর্ব