জান্নাতী "হুর" কেমন হবে?
মাটির মানুষ পৃথিবীতে মাটির জীবন সঙ্গীনি বানানোর জন্য কত পেরেশান,কত সাধনা,কত কলা কৌশল অবলম্বন করে..যারা মাঝে মাঝে বিশ্বাসঘাতকিনী হয়..আর আল্লাহ তার নেক বান্দাদের জন্য জান্নাতের মধ্যে এরকম জীবন সঙ্গীনি বানিয়ে রেখেছেন যাদেরকে কোন চোখ দেখে নি,কোন মন কল্পনা করতে পারবে না কত সুন্দরী তারা,তারা বিশ্বাসঘাতকতা জানে না,ভালো বাসা বদলায় না সব সময়ে এক রকম থাকে,সব সময়ে অনুগত থাকে,যৌবনে কখনো ভাটা পড়ে না..তারা কেউ স্বর্নের,কেউ রুপা,কেউ লাল ইয়াকুত,কেউ জমরদের তৈরি ,কেউ মনি-মুক্তা দিয়ে তৈরি..আল্লাহই ভালো জানেন কত দামী দামী উপাদান দিয়ে তাদেরকে তিনি তৈরি করেছেন..
'আয়না' নামে জান্নাতের এক হুরের বর্ননা নিচে দেয়া হলো..
জান্নাতের একজন হুরের নাম আয়েনা , যার ডানদিকে ৭০,০০০ চাকর , বাম দিকে ৭০,০০০ চাকর , আর সামনে আছে ১,৪০,০০০..
সে বলছে - "ঐ ব্যক্তি কোথায় যিনি সৎ কাজের আদেশ দেয় আৱ অসৎ কাজ হতে বিরত থাকতে বলে ? ” আল্লাহ আমাকে তার জন্য তৈরি করেছেন।
হজরত আব্দুল ওয়াহেদ ইবনে জায়েদ (রহঃ) একজন তাবে- তাবেঈন ছিলেন । তিনি বলেন যে , তিনি একবার আল্লার রাস্তায় জিহাদ করতে ছিলেন।
এক কিশোর তার সাথে ছিল। বয়স তার ১৬ জিহাদের উদ্দেশ্যে যখন তারা রোমে পৌছল তখন রোমের সৈন্যগণ তাদের বাধা দিল। রোমের সৈন্যগণ তাদের সামনে এবং পিছনে , ঠিক এই অবস্থায় ঐ ছেলেটি জোড়ে জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলছে হায় ! আমি তাে আয়নার ( জান্নাতী একজন হুরের নাম ) জন্য দিশেহারা হয়ে পড়েছি তার এ কথা শুনে সবাই বলতে শুরু করলো , ছেলেটি পাগল হয়ে গেছে "। তারপর ছেলেটি হজরত আবদুল ওয়াহেদ - এর নিকট গিয়ে বললেন “ হে আবদুল ওয়াহেদ , আমি তো আয়নার জন্য আশেক " । আবদুল ওয়াহেদ বললেন “ হে বৎস ! তোমার কি হলাে ?
ছেলেটি বলে যাচ্ছে - আমি স্বপ্নে দেখলাম এক ব্যক্তি এসে আমার হাত ধরে বলছে , চল – আমি তােমাকে আয়নার কাছে নিয়ে যাব। সে আমার হাত ধরে একটি বাগানের নিকট নিয়ে গেল , দেখলাম একটি পানির নহর। সেই নহরের কিনারায় দাড়িয়ে আছে মেয়েরা তাদের পরিধানে এমনি পোষাক আর তাঁদের এত সৌন্দৰ্য যা আমি কোনদিন দেখিনি , তাদের সৌন্দর্য দেখে আমি দেওয়ানা হয়ে পড়লাম।
মেয়েগুলো আমাকে দেখে বলতে লাগলো , “ মারহাবা! মারহাবা ! ! আয়েনার স্বামী এসে গেছে । আমি তাদের বললাম , “ তােমাদের ভিতর অয়েনা কে?" তারা বললো , আমরা তাে তার চাকরাণী , আপনি কিছু সামনে যান সেখানে আমাদের মালেকা আছেন"। আমি আয়েনার তালাশে আবার চলতে থাকলাম , দেখলাম —এক দুধের নহর, যার কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে এমন সুন্দরী যুবতীরা যাদের দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। তারা আমাকে দেখে বলা শুরু করলাে , “ আয়েনার স্বামীর জন্য খােশ - আমদেদ ! " আয়েনার স্বামীর জন্য খােশ - আমদেদ ! ! "
আমি বললাম , “ আরে ! আমাকে আগে বল যে অায়েনা কে? "তারা বললাে , “ আমরা তো তার খেদমতগার, আমরা তার বাদী, আপনি আগে যান সেখানে আমাদের মালেকা আছেন"। আয়েনার তালাশে আমি পেরেশান হয়ে গেলাম । চাকরাণীদের সৌন্দর্যই যদি এত মধুর হয় তাহলে অয়েনার চেহারা কেমন ? এগুলো চিন্তা করতে করতে আমার আগ্রহ আরে বেড়ে গেল। আমি আগে গেলাম , দেখলাম - এক শরাবের নহর যার কিনারায় দাড়িয়ে আছে অনেকগুলাে মেয়ে । এরা এতই সুন্দরী ছিল যে , যাদের সৌন্দর্য্যে দেওয়ানা হয়ে আমি পিছনের সমস্ত মেয়েদের কথা ভুলে গেলাম । তারা আমাকে দেখা মাত্র হাত উঠিয়ে বলতে লাগলাে , আয়েনার স্বামীর জন্য মারহাবা ! অায়েনার স্বামীর জন্য মারহাবা ! ! ”
আমি বললাম - হে আল্লার বান্দীরা ! আগে তাে বলে আয়েন কোথায় ? তারা বললো — আরে , আমরা তো তার খেদমতে নিয়ােজিত , আরো সামনে গিয়ে তাকে তালাশ করুন । আমি যথেষ্ঠ আগ্রহ নিয়ে সামনে চললাম , দেখলাম - এক মধুর নহর , কিনারায় দাড়িয়ে আছে এমন কিছু মেয়ে যাদের সৌন্দর্যের বিবরণ দেওয়ার ভাষা আমার নেই । আমাকে দেখে তারা বললাে , “ মারহাবা ! মারহাবা ! ! আয়েনার স্বামী এসে গিয়েছে , মারহাবা"।
অায়েনাকে দেখার জন্য আমার আগ্রহ আরো বেড়ে গেল । আমি তাদের বললাম , “ হে আল্লার বান্দাগণ , অয়েনা কি আছে ? তারা বললো - “ হ্যাঁ আছে আমরা তার বাদী , আপনি আরাে আগে যান"। সামনে গিয়ে দেখি একটি তাবু । দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে আপাদমস্তক অলংকার সজ্জিত অপূর্ব সন্দরী যুবতীগণ । তারা অামাকে দেখা মাত্র , তাবুর ভিতর গিয়ে বললো , “ হে আয়না ! তােমার স্বামী এসে গিয়েছে! তােমার স্বামী এসে গিয়েছে!!" আমি তাদের কথা শুনা মাত্র তাবুর দিকে দিলাম দৌড় , অায়না কেমন তা দেখবার জন্য । তাবুর ভিতর গিয়ে দেখলাম আয়েনা বালিশে হেলান দিয়ে স্বর্ণ জড়িত মতি ও ইয়াকুতের কারুকার্য পালংকের উপর বসে আছে ।
এই সেই আয়েন । যার সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছে যে , ৭০,০০০ (সত্তর হাজার) চাকরাণী আর ডানে আর ৭০,০০০ (সত্তর হাজার) চাকরাণী তার বামে থাকবে আর ১,৪০,০০০ তার সামনে থাকবে। তার পরিধানে থাকবে ৭০ ধরনের কাপড়, প্রতিটি কাপড়ের রং থাকবে আলাদা, তার শরীরে ৭০ প্রকারের খুশবু এবং প্রতিটি খুশবু থেকে আলাদা আলাদা ঘ্রাণ বইবে, মাথায় থাকবে তাজ যেখানে সত্তরটি ইয়াকুত লাগানো থাকবে , তার একটি ইয়াকুত যদি পৃথিবীতে রাখা হয় , তবে সারা পৃথিবী আলােকিত হয়ে যাবে , তার মাথার চুল খোলা ; তার চুল এতই লম্বা যে চলবার সময় পা পর্যন্ত এসে যায় , তার সেই চুলের ১টি চুল যদি অন্ধকার রাত্রে পৃথিবীতে রাখা হতো তবে সারা পৃথিবী আলোকিত হয়ে যেত , ৭০ জোড়া কাপড় ভেদ করে তার শরীর দেখা যাবে , তার গালের দিকে তাকালে নিজের চেহারা দেখা যায় ।
অয়েনা আমাকে দেখে বললাে - "হে আল্লার দোস্ত ! তােমার আমার মিলন খুবই নিকটে"। তাকে দেখা মাত্র আমার মন চাইলো যে আমি তার সাথে একটু গলা মিলাই। এগিয়ে চললাম , যখন তার সাথে গলা মিলানাে শুরু করবাে করবো ঠিক সেই মুহুর্তে আয়েনা বললো - “ সবর কর , সবর কর , মানুষ বড়ই অধৈৰ্যশীল , এখন নয় , এখন নয় , এখনো তাে তুমি জিন্দা , ঘাবড়িও না, কিছুক্ষণের ভিতর তোমার আমার নাস্তা এক সাথেই হবে ”।
স্বপ্ন বলা শেষে ছেলেটি তার সেনাপতি (আঃ ওয়াহেদ ইবনে জায়েদ রহঃ) কে বললেন," আমি আর বাচতে চাই না , আমি তাে আয়েনাকে চিরদিনের জন্য অর্জন করতে চাই ”। এ কথা বলে সে রোমান সৈন্যদলের ভিতরে তলোয়ার নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লাে এবং শহীদ হয়ে গেল । এই যুদ্ধে মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই ছেলেটিই প্রথম শহীদ হয়ে ছিলেন ।
[ “ অয়না-হুর ” , এই ঘটনাটি ইমাম ফকীহ আবুল লায়ছ সমরকান্দী (রহঃ) - এর লিখিত “ তাম্বীহুল গাফেলীন ' ' কিতাবের ২৩০ পৃষ্ঠায় এবং হযরত ইমাম গাজ্জালী ( রহঃ ) - এর লিখিত “ এহইয়া উল মুদ্দীন এর চতুর্থ খণ্ডের ৪৯৪ পৃষ্ঠায় রয়েছে — মুফতী ফয়জুল্লাহ ইব্রাহীমী , জামেয়া মোহামাদীয়া আরাবিয়া ,ঢাকা ]

Comments